শুক্রবার সবশেষ রাসেলের সাথে ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা হয়। বলেছিলেন, ‘পাঞ্জাবি পরে বাবার সঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে যাব।’ আশায় ছিলেন মা। শেষ পর্যন্ত মা-ছেলে কারও আশাই পূরণ হলো না। ছেলের কথা বলতে বলতে বুক চাপড়ে আহাজারি করছিলেন মা সেফালি আক্তার। খাগড়াছড়িতে ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারানো রাসেলের বাড়িতে চলছে স্বজনদের আহাজারি। সন্তানের মরদেহের জন্য অপেক্ষারত স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে আকাশ-বাতাস। বারবার মূর্ছা খেযে মাটিতে পড়ছে বাবা-মা।
সোমবার (২৮মে) ঘূর্ণিঝড় রিমালে ভেঙে পড়া গাছ সরাতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে প্রাণ হারান ফায়ার ফাইটার রাসেল। খবরটি শুনে ভেঙে পড়েছেন মা সেফালি আক্তার। সোমবার বিকেলের দিকে ঢাকার ধামরাই উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের পশ্চিম বাসনা এলাকায় ফায়ার ফাইটার রাসেল হোসেনের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেফালি আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। কোন সান্তনাই শান্ত করতে পারছে না তাকে। কান্না বিজড়িত কষ্ঠে তিনি জানান, মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসে চাকরি নিয়েছিলেন রাসেল হোসেন। কর্মস্থল ছিল খাগড়াছড়িতে। শুক্রবার সবশেষ ভিডিও কলে মায়ের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনা শোনার পরেই আল্লাহর কাছে আমার বাবাকে ভিক্ষা চাইছি, আল্লাহ তুমি আমার বাবাকে ভিক্ষা দাও, আমার ছেলে থাকলে এত কষ্ট হইতো না।’ পশ্চিম বাসনা এলাকার আব্দুর রাজ্জাক ও সেফালি আক্তার দম্পতির ঘরে এক মেয়ে ও এক ছেলে রাসেল হোসেন। ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে এইচএসসিতে ভর্তি হন ধামরাইয়ের ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল এন্ড কলেজে। সেখানে পড়া অবস্থায়ই ২০২৩ সালে ফায়ার সার্ভিসে ফায়ার ফাইটার পদে চাকরি হয় রাসেলের। সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের ফলে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা এলাকায় গাছ ভেঙে পড়েছে এমন খবর পেয়ে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায় এবং গাছ অপসারণ করতে থাকে। গাছ অপসারণের একপর্যায়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসায় ফায়ার ফাইটার মো. রাসেল হোসেন বিদ্যুতায়িত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রাতেই ছেলের মৃত্যুর খবর পান মা সেফালি আক্তার। রাসেলের বাড়িতে তিন কক্ষের চৌচালা টিনের ঘর। চাকরিতে যাওয়ার পর বাড়ি ফিরলে মা-বাবার সঙ্গেই ঘুমাতেন রাসেল। ছেলের স্মৃতি মনে করে হাওমাও করে বুক চাপড়ে কেঁদে ওঠেন মা। ছেলেকে মানুষ করতে পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন জানিয়ে সেফালি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের জন্য আমি কত কষ্ট করছি, আমার ছেলের যখন আট বছর বয়স তখন থেকে চাকরি করি, আজ ১৩ বছর আমি আমার ছেলের সুখের জন্য চাকরি করি। সেই ছেলে আমার কাছে থেকে চলে গেলো, এখন আমি কাকে নিয়ে বেঁচে থাকুম।
বাবা আব্দুর রাজ্জাক আর্তনাদ করে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার দিন কেমনে যাইবো, আবার বাবা আমাকে রেখে কেমনে পলাইলো। আমি এত কষ্ট করে ওরে মানুষ করছি। আমি বুকের মধ্যে রাইখা ওরে মানুষ করছি। আমি ওরে কেমনে ভুইলা থাকুম, আমার বাড়ির প্রদীপ শেষ। আমাকে ভাত কাপড় না দিত, আমাকে মাটি তো দিত। আমি কইছি আল্লাহ ওরে তুমি বাঁচিয়ে রাইখো, আমাকে যেনো মাটি দিতে পারে। আমার সেই ভাগ্য হইলো না। আল্লাহ আজকে আমার হাতে ওরে মাটি দেওয়াইবো না। আমার দিন কেমনে যাইবো বলে বলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে বাবা।